, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


লিবিয়ায় জিম্মি এক গ্রামের ৫০ যুবক, মুক্তিপণেও মিলছে না খোঁজ

  • আপলোড সময় : ২৩-০৬-২০২৪ ১০:২৩:০৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৩-০৬-২০২৪ ১০:২৩:০৮ পূর্বাহ্ন
লিবিয়ায় জিম্মি এক গ্রামের ৫০ যুবক, মুক্তিপণেও মিলছে না খোঁজ
এবার অবৈধপথে ইতালি যাবার সময় লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে জিম্মি মাদারীপুরের একই গ্রামের অর্ধশত যুবক। মোবাইলে অডিও বার্তা পাঠিয়ে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ভিটেমাটি বিক্রি করে টাকা দিয়েও মিলছে না মুক্তি। প্রশাসন বলছে, দূতাবাসের মাধ্যমে যুবকদের ফিরিয়ে আনতে নেয়া হয়েছে পদক্ষেপ।
 
এদিকে লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে জিম্মি এই যুবকদের তালিকায় রয়েছে মাদারীপুর সদর উপজেলার বালিয়া গ্রামের মতলেব ফকিরের ছেরে শাকিব ফকির, বাদশা হাওলাদারের ছেলে হাসান হাওলাদার, সালাম হাওলাদারের ছেলে নুর আলম হাওলাদার, জব্বার হাওলাদারের ছেলে বেল্লাল হাওলাদার, মোক্তার মোল্লার ছেলে জসিম মোল্লা, এনামুল হাওলাদারের ছেলে নয়ন হাওলাদার, সামচু সরদারের ছেলে হৃদয় সরদার, সেকেনদার আলী সরদারের ছেলে সাইফুল সরদার, গোলাম ফারুক সরদারের ছেলে মোস্তাফিজুর সরদার, আমিরলাল ফকিরের ছেলে শাহীন ফকির, দুলাল মোল্লার ছেলে আরমান মোল্লাসহ অর্ধশত যুবকের নাম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বালিয়া গ্রাম। এই গ্রামের যুবক হাসান হাওলাদার। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভাগ্য ফেরাতে অবৈধপথে ইতালি যাবার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। ঢাকা থেকে লিবিয়া পৌঁছে ধরা পড়েন মাফিয়াদের হাতে।

পরে বাবা বাদশা হাওলাদার ও মা রহিমা বেগমের মোবাইলে পাঠানো হয় নির্যাতনের অডিও বার্তা। মুক্তিপণ হিসেবে মাফিয়ারা দাবি করেন ৩০ লাখ টাকা। সন্তানকে বাঁচাতে ভিটেমাটি বন্ধক রাখার পাশাপাশি চড়া সুদে দফায় দফায় ২২ লাখ টাকা এনে তুলে দেন স্থানীয় দালালদের হাতে। তবে, হাসানের দেশে ফেরা এখনও অনিশ্চিত।

একইভাবে বালিয়া গ্রামের অর্ধশত যুবক ভাগ্য ফেরাতে ইতালি যাবার পথে লিবিয়ায় জিম্মি মাফিয়াদের হাতে। এসব যুবককে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তবুও মিলছে না মুক্তি। আদরের সন্তানদের ফিরে পেতে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন স্বজনরা।
 
এদিকে স্বজনদের অভিযোগ, প্রলোভন দেখিয়ে বালিয়া গ্রামের রশিদ সরদারের ছেলে দেলোয়ার সরদার প্রত্যেকের পরিবারের কাছ থেকে কৌশলে আদায় করছে মুক্তিপণের টাকা। তার সহযোগী একই গ্রামের মজিদ ফকিরের ছেলে এমদাদ ফকির ও হাবিব ফকিরের ছেলে কামাল। এই ঘটনায় দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
 
মাফিয়াদের হাতে জিম্মি  হাসানের বাবা বাদশা হাওলাদার বলেন, ‘ধাপে ধাপে দালাল দেলোয়ার সরদার ও তার দুই সহযোগী এমদাদ ফকির ও কামাল ফকির এ পর্যন্ত ২২ লাখ টাকা নিয়েছে। প্রথমে সুদে টাকা এনে দিয়েছি, পরে বাড়ি বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছি। এখন আর টাকা দেয়ার উপায় নেই। আমার ছেলে এক সপ্তাহ ধরে কেমন আছে, তাও জানি না।’
 
এদিকে হাসানের মা রহিমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে মাফিয়ারা জিম্মি করে রেখেছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু আমার ছেলেকে মুক্তি দিচ্ছে না। আমরা আমাদের সন্তানের মুক্তি চাই, আর দালালদের বিচার চাই। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’
 
লিবিয়ায় বন্দি বেল্লাল হোসেন হাওলাদারের স্ত্রী সিগ্ধা আফরোজ বলেন, ‘ইউরোপ যাবার স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেলো। এই স্বপ্নটা বাস্তব হইলো না। এটা হবে কিনা সেটাও আমরা জানি না। আমার স্বামী চার মাস আগে বাড়ি থেকে বের হইছে, পরে লিবিয়ায় দালালরা ও মাফিয়ারা জিম্মি করে ফেলেছে। তার মুক্তির জন্য এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ টাকা দিয়েছি। ধাপে ধাপে এতো টাকা দিলাম, কিন্তু মাফিয়ারা মুক্তি দিচ্ছে না। এর শেষ কোথায় আমরা তাও জানি না।’

বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আজিজুল ফকির বলেন, ‘দেলোয়ার দালালের কারণেই এই যুবকরা মাফিয়াদের হাতে জিম্মি। এই যুবকদের নির্যাতন করে লাখ লাখ আদায় করছে চক্রটি। আমরা সবাই এই দালালের বিচার চাই। আর বন্দি যুবকদের ফেরত চাই।’ স্থানীয় বাসিন্দা নাসিমা বেগম বলেন, ‘এই দালাল দেলোয়ার সরদারের কারণে আমরা দেউলিয়া হয়ে গেছি। দেলোয়ার প্রথমে মিষ্টি কথা বলে যুবকদের লিবিয়া পাঠায়, পরে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
 
এ বিষয়টি নিয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম সালাউদ্দিন বলেন, ‘লিবিয়ায় যুবকদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে- এমন তথ্য এখনও থানায় নেই। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, ‘দূতাবাসের মাধ্যমে লিবিয়ায় বন্দি যুবকদের ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বন্দি যুবকদের পরিবার মামলা করলেও তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
সর্বশেষ সংবাদ